Saturday 4 June 2016

Dakghar ( ডাকঘর )



ডাকঘর
Dakghar - image Symbol

 

সারমর্মঃ

সীমার মাঝে অসীমের আহ্বান শুনতে পেয়েছিলেন কবিগুরু যার স্পষ্ট ইঙ্গিত খুঁজে পাওয়া যায় অমলের মধ্যে । অমলের নিদ্রা তথা আরোগ্য লাভ তাকে মুক্তির আস্বাদ দিয়েছিল যা একাধারে চিরকালীন মুক্তিকামী মানুষেরও আকাঙ্ক্ষা । শৃঙ্খলাবদ্ধ অন্ধকাররাজ্য থেকে বেড়িয়ে আসা মুক্তির পথযাত্রী মানুষের অদ্বিতীয় রুপ অমল ।

রূপক - নাটক হিসেবে  ‘ডাকঘর’ নাটকের সার্থকতা পর্যালোচনা করো

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রূপক / প্রতীক নাটকগুলি যে একটি বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী একথা অনস্বীকার্য । বাংলা সাহিত্যে এই ধরনের নাটক আগে রচিত হয়নি বললেই চলে । ‘ডাকঘর’ নাটকটি রবীন্দ্রনাথের অরূপ সাধনার যুগের রচনা । নাট্যসমালোচকেরা ‘ডাকঘর’ নাটকটিকে রূপক সাংকেতিক  নাটক বা রূপক-সংকেতমিশ্র নাটকের অন্তভুক্ত করেছেন । রূপকের ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Allegory’ . এর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হল এক বোঝাতে অন্য বলা । ‘Allegorical Drama’ বা রূপক নাটক বলতে বোঝায় বিশেষ ধরনের একরূপ রচনা যাতে কাহিনি, ঘটনা , চরিত্র প্রভৃতি উপায় বা উপলক্ষ মাত্র এবং লক্ষ্য হচ্ছে কোন ভাব বা তত্ত্ব । আপাত কাহিনিটির সমান্তরালে অন্তনির্হিত ভাবার্থটিকে ব্যক্ত করা হয় এখানে ।
Symbol এর বাংলা প্রতিশব্দ হল সংকেত কিন্তু Symbolical Dramaএর বাংলা প্রতিশব্দ হওয়া উচিৎ প্রতীক নাটক । কারন সংকেত ও প্রতীক সমার্থক নয় । দুয়ের মধ্যে ভেদরেখা টানা খুব কঠিন । এককথায় পণ্ডশ্রম মাত্র । প্রসিদ্ধ সমালোচক Comte প্রতীকের বৈশিস্ট্য নিরূপণ করতে গিয়ে বলেছেন,-
Symbol means every conventional representation of the idea by the forms of the unseen by the visible.”
রবীন্দ্রনাথের একটি গান আছে – “কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে ।”
 অথবা
“আমি চঞ্চল হে , আমি সুদূরের পিয়াসী ।”
-“ডাকঘর” নাটকে এই সুদূরের সংকেত , অজানার ইঙ্গিত সকরুণ গীতিমাধুর্যে আত্মপ্রকাশ করেছে । অমল, সুধা, ঠাকুরদাদা, ডাকহরকরা, অদৃশ্য রাজাকে কেন্দ্র করে এমন সুন্দর করুন একটি রহস্য ঘনীভূত হয়েছে এবং এমন সুকৌশলে শেষপর্যন্ত সেই রহস্যটিকে ধরে রাখা হয়েছে যার তুলনা অন্য সাংকেতিক রহস্যময় নাটকগুলিতে নেই ।
ডাকঘর নাটকের চরিত্রগুলি অধিকাংশই রূপক বা সাংকেতিক । নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ‘অমল’ ; যার অর্থ অমলিন । রুগ্ন বালক অমল অভিজ্ঞ বিষয়ী মাধব দত্তের পোষ্যপুত্র ; সম্পর্কে তিনি অমলের পিসামশায় । অসীম মমতা বশত মাধব দত্ত রুগ্ন, অসুস্থ অমলকে ঘরের বাইরে যেতে বারণ করে দেন কারন কবিরাজের মতে –
“ শরৎকালের রৌদ্র আর বায়ু দুই-ই ঐ বালকের পক্ষে বিসবৎ -”
অমলের যে অসুখ, তাও প্রকৃত বাস্তব ব্যাধি নয় আত্মার বন্ধনপীড়নের ব্যাধি । শাসনের চাপে ক্লান্ত পীড়িত আত্মার ক্রন্দন ও তার মুক্তির ইঙ্গিত নাটকে তুলে ধরা হয়েছে । লৌকিক কবিরাজের চিকিৎসাশাস্ত্র জ্ঞান আমাদের জানিয়ে দেয় যে অমল মৃত্যুপথেই চলছে । তাই স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন , -
“ ডাকঘরের অমল মরছে বলে সন্দেহ যারা করে তারা অবিশ্বাসী – রাজবৈদ্যের হাতে কেউ মরে না , কবিরাজটা ওকে মারতে বসেছিল বটে ।”
-তাই রাজকবিরাজ এসে অমলের ঘরের সব দরজা জানালাগুলি খুলে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সে সুস্থবোধ করে । তার ব্যাথা-বেদনার অবসান ঘটে এবং অমল ঘুমিয়ে পড়ে । তাই রাজকবিরাজের মুখে শোনা যায় –
“এলো , এলো , ওর ঘুম এলো । ...আকাশের তারাটি থেকে আলো আসুক , ওর ঘুম এসেছে। ”
প্রসঙ্গত অমলের এই ঘুমিয়ে পরার সাথে রবীন্দ্রনাথের একটি গানের অনুসঙ্গ আমাদের মনে পরে –
“এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়
   আমার মুক্তি ধুলায় ধুলায় ঘাসে ঘাসে ।।”
এই নাটকের নায়ক অমল চরিত্রের বৈশিস্ট মোটামুটি দু’ভাগে ভাগ করা যাতে পারেপ্রথম স্তরে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হওয়ার আগ্রহ তার চরিত্রে লক্ষ্য করা যায় আর দ্বিতীয় স্তরে রাজার বা অরূপের জন্য উদ্বেগ । দ্বিতীয়টি যে প্রথমটির পরিণাম তা কবি সুস্পস্টভাবেই বুঝিয়ে দিয়েছেন । কবি লিখেছেন –
Amal represents the man whose soul has received the call of the open road...”
অমলের বিভিন্ন উক্তির মধ্য দিয়ে এই কথাটিই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে সে পণ্ডিত হতে চায় না । সে বলেছে ,-
“ আমি যা আছে সব দেখব – কেবলই দেখে বেড়াব।”
“ আমার ভারি ইচ্ছে করছে ঐ সময়ের সঙ্গে চলে যাই – যে দেশের কথা কেউ জানে না সেই অনেক দূরে ।”
অমলের নানা উক্তির মধ্যে সেই অচীনপুরের ইশারা রয়েছে। যারা বিষয়ী, সংসারী তথা মাধব দত্ত বা পঞ্চানন মোড়ল – এর মত লোকেরা সুদূরের আহ্বান, আজানার ইঙ্গিত শুনতে পায় না, দেখতেও পায় না । তাই রাজার কাছ থেকে চিঠি আসবে শুনে মাধব দত্ত আতঙ্কিত হয় । তার দৃষ্টি সংকীর্ন ও সীমিত । অমল যে লোক-কল্পনাতীতের ডাকঘর থেকে চিঠি পেতে পারে একথা বিশ্বাস করতে না পেরে মোড়ল তাকে নিয়ে ঠাট্টা করে বলে –
“ রাজা তোমাকে চিঠি লিখবে ! তা লিখবে বৈকি ! তুমি যে তার পরম বন্ধু ! ...”
নাটকের গূঢ় তত্ত্বের ভাষ্যকার হলেন ঠাকুরদাদা । তার দৃস্টি স্বচ্ছ । তিনিও অনুভব করতে পারেন সুদূরের আহ্বান । ঠাকুরদাদার কল্পনাশক্তিও অমলের কাছে হার মেনেছে ,-
“অমন নবীন চোখ তো আমার নেই তবু তোমার দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমিও দেখতে পাচ্ছি ।”
অমলের সঙ্গে আরো তিনটি চরিত্রের যোগবেশ নিবিঢ় । দইওয়ালা , প্রহরী ও সুধা । দইওয়ালার দই বেচার সুর ও নানা জায়গায় তার ঘুরে বেড়ানোর স্বাধীনতা অমলকে মুগ্ধ করে । প্রথমে বিরক্ত হলেও পরে অমলকে না ভালবেসে পারে না দইওয়ালা । দই বেচারও যে কত সুখ সে অমলের সঙ্গে আলাপে বুঝতে পারে,-
“ ... আমার কোন লোকসান হয় নি । দই বেচতে যে কত সুখ সে তোমার কাছে শিখে নিলুম ।”

Dakghar - Symbolic Image
 অন্যদিকে প্রহরী যেন এখানে সময় তথা কালের প্রতীক হয়ে উঠেছে ; “ঘণ্টা এই কথা সবাইকে বলে , সময় বসে নেই , সময় কেবলই চলে যাচ্ছে ।”  সময় কোথায় যায় ? অমলের শিশুসুলভ প্রশ্নের উত্তরে সে জানায় – “ সে দেশে সবাইকে যেতে হবে ।” প্রহরী এখানে কালের যাত্রার ব্যাখ্যায় মৃত্যুর দেশের ইঙ্গিত দিতে গিয়ে জানায় “ সময় হলে তবে ঘণ্টা বাজিয়ে দিই।”
রাজার ডাকহরকরাদের নামটিও লক্ষ্য করার মতো । একজনের নাম বাদল ও আরেকজনের নাম শরৎ । এই নামদুটি যেন ঋতুর প্রতীক হিসেবে উঠে এসেছে । প্রকৃতিও এই নাটকে বিশিস্ট স্থান পেয়েছে ।
বস্তুত 'ডাকঘর' নাটকে মানবচিত্তের যেটুকু পার্থিব রস ও রহস্য তা সুধাকে কেন্দ্র করেই । “ অমল যে শুধু প্রতীক হইয়া ওঠে নাই তাহা সুধার জন্যই ।” নাটকের শেষে দেখা যায় সুধা অমলের জন্য ফুল এনেছে কিন্তু তখন অমল ঘুমের অতলে ডুব দিয়েছে । তাই সে রাজকবিরাজকে বলেছে – “ বোলো যে সুধা তোমাকে ভোলে নি ।” এই কথাটিতে যেন মানব রসের সঞ্চার করেছে । সুধার হাতের ফুল মূলত প্রেমের প্রতীক । শেষ মুহুর্তে মানবীয় প্রেমের করুন সজল স্পর্শ দ্বারা কবি তার শিল্পসৃস্টির Tragic মাধুর্য দান করেছে

উপসংহার অমল এখানে হয়ে উঠেছে মানবাত্মার প্রতীক আত্মা চায় মুক্তি সে ব্যাকুল হয়ে ওঠে রাজা বা অরূপের সাথে মেলার জন্য এখানে ঘুম হয়ে উঠেছে মৃত্যু তথা মুক্তির প্রতীক এই মৃত্যু জীবনের শেষ নয় , তা নবজীবন লাভের মাধ্যম মাত্র মৃত্যু পূর্নতায় পৌছানোর সোপান মৃত্যুর মধ্যেই মানুষের বন্ধনমুক্তি ঘটে সুতরাং ঘুম এখানে প্রতীক নিদ্রা হয়ে উঠেছে পাশাপাশি দেখা যায় যে নাটকের নামকরণেও একটি রূপকের ব্যবহার রয়েছে  এখানেডাকঘরহল বিপুল বিচিত্র পৃথিবী তথা বিশ্বপ্রকৃতি চিঠি যেন সৌন্দর্য্য ও আনন্দ রূপের প্রতীক হয়ে উঠেছে সুতরাং দেখা যাচ্ছে সমস্ত নাটকেই রূপকসংকেতের মাধ্যমে তিনি মূলত রুদ্ধ ও বদ্ধ জীবন থেকে আনন্দসৌন্দর্য্যমুক্তির বানী পৌছে দিতে চেয়েছেন অমলের মাধ্যমে রূপকের স্পর্শে নাটকটি যথার্থই রূপক  নাটক  হয়ে উঠেছে



  • If you liked our effort then like & subscribe to our Facebook page & Youtube Channel  

Thank You


5 comments:

  1. অসাধারণ। খুব সুন্দর মননশীল আলোচনা করা হয়েছে যা আমাদের পাঠকদের খুব সাহায্য করেছে

    ReplyDelete
  2. অসাধারন আলোচনা

    ReplyDelete
  3. Merit Casino | FairPay Bonus up to €1500 | YGG
    At Merit Casino, you 샌즈카지노 can play any game online with instant access, no registration required. To claim the bonus and start 제왕카지노 betting, you'll have to deposit 메리트 카지노 주소

    ReplyDelete
  4. খুব সুন্দর আলোচনা। বিশেষ ভাবে সমৃদ্ধ হলাম। লেখকের প্রতি শ্রদ্ধা রইলো।

    ReplyDelete
  5. চমৎকার ভাবের বিশ্লেষণ।

    ReplyDelete