Wednesday 8 June 2016

Chaturanga ( চতুরঙ্গ )



চতুরঙ্গ

Image - Chaturanga ( Symbolic )
শচীশ তার বন্ধুকে কি নামে ডাকত ? নারীর ব্যাক্তিত্ব সন্ধানী আকাঙ্ক্ষা দামিনীকে আশ্রয় করে শানিত উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে । - মন্তব্যটি পর্যালোচনা কর ।





‘আমি যে প্রতিটি নিঃশ্বাসে ভালোবেসেছি এই নতুন জীবনের পরের জীবন দ্বিগুণভাবে বাঁচব ।’
                                                                                                             -   কিশোয়ার নাহিদ

                                       নারীর মোহিনী অবয়বের ওপর যে মঞ্চসাজের আলো এসে পরেছে , তা মূলত ছদ্মবেশী । কিন্তু দামিনী চরিত্রের আলো আরোপিত নয় , অন্ধকারের হৃদয় থেকে উৎসারিত আলো । ‘চতুরঙ্গ’ উপন্যাসটি যেন অখণ্ড জীবনরূপের চারটি অঁঙ্গের কাহিনী । উপন্যাসে দামিনী চরিত্রটির জীবনসত্য অন্বেষণের প্রচেষ্টা , এক  নতুন  আঙ্গিকে  দেখা গিয়েছে ।

‘যেন এক পশলা বৃষ্টি , যেন দেয়ালের পাশের অদৃশ্য লোক হইতে ফুলের ছিন্ন পাপড়ির মতো জীবনের ছোট ছোট পরিচয় স্পর্শ করিয়া যাইত ।’

                                     ‘দামিনী’ নামের অর্থ ‘বিদ্যুৎ চমক’ । তার নামের সঙ্গেঁ তার চরিত্রটিও শানিত উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে উপন্যাসে । প্রথম থেকে সে যেন প্রতিবাদী , বিদ্রোহিনী । অন্নদাপ্রসাদ দামিনীর সাথে বিয়ে দেন শিবতোষের , কিন্তু সংসার বিরাগী শিবতোষের সন্ন্যাসী জীবন গ্রহন করলেও দামিনী তা কখনোই মেনে নেয়নি । তাই মৃত্যুর পূর্বে শিবতোষ দামিনীর কামনা বাসনার মোহ ত্যাগের জন্য লীলানন্দ স্বামীর কাছে সমর্পন করে যায় । এরপর থেকেই বেপড়োয়া দামিনী অধিকারহীনতার অভিমানে আরও ক্ষুব্ধ ও ব্যাক্তিত্বময়ী হয়ে ওঠে –

‘দামিনীর মধ্যে নারীর আর এক বিশ্বরূপ দেখিয়াছি , সে নারী মৃত্যুর কেহ নয় , সে জীবনরসের রসিক । ... সে কিছুই ফেলিতে চায় না , সে সন্ন্যাসীকে ঘরে স্থান দিতে নারাজ’ ;

        
                                       দামিনী বৈরাগ্যকে কখনো স্বীকার করে নি সে জীবনকে পুরোপুরি ভোগ করতে চেয়েছে , অপরদিকে উপন্যাসে আর এক নারী চরিত্রের সন্ধান পাই , ননীবালা । তার চরিত্রটি দামিনীর একেবারে বিপরীত মূখী । সে জীবন থেকে মৃত্যুর পথকে বেছে নিয়েছে । -


“... অপবিত্রের কলঙ্ক যে নারী আপনাতে গ্রহণ করিল ,পাপিষ্টের জন্য যে নারী জীবন দিয়া ফেলিল , সে নারী মরিয়া জীবনের সুধাপাত্র পূণর্তর করিল ।”

Symbolic image - Damini



                                      তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে থেকেও দামিনী প্রবল ব্যাক্তিত্ব ও স্বাভাবিক মনোবৃত্তি নিয়ে উপস্থাপিত হয়েছে । ‘দামিনী যেন শ্রাবনমেঘের ভেতরকার দামিনী ।’ তার সাজ-পোশাকে , বৈধ্যব্যের লক্ষণ ছিল না । সে অনায়াসে গুরুজিকে অবজ্ঞা করেছে , আধুনিক লেখকের বই পড়েছে , নতুন করে বাঁচার তথা জীবনকে আরো দৃঢ়ভাবে বাঁচতে চেয়েছে শচীশকে আঁকড়ে ধরে , সে শান্ত হয়ে উঠেছে কিন্তু এ চেষ্টায় ব্যার্থ হয়ে তার পুঞ্জিত যৌবন হয়ে উঠেছে সর্বগ্রাসী আদিম জন্তু । অন্ধকার গুহায় তার যৌবনক্ষুধা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পরেছে শচীশের ওপর ।


                                   এরপরেই দেখা যায় অকুণ্ঠিত তেজে শ্রীবিলাসকে খুটি করে শচীশের মনে ঈর্ষা জাগাবার চেষ্টা করেছে । শ্রীবিলাশের সাথে দামিনী সহজভাবে মনের কথা বলে যা শচীশের সহ্য হয় না , যাতে দামিনীর আত্মতৃপ্তি ঘটে এবং তার “চোখ দিয়া বিদ্যুৎ ঠিকরাইয়া পড়িল – সে মনে মনে কঠিন হাসি হাসিল ।”


                                  পরবর্তীতে বিভ্রান্ত শচীশ আত্মসংবরণের জন্য দামিনীকে আশ্রয় ছেড়ে চলে যেতে বললে , প্রতিবাদী দামিনী তীব্র ঝংকারে বলে উঠে – “... আমি কি তোমাদের দশ-পচিঁশের ঘুঁটি ? ... আমাকে তোমাদের ভালো লাগিতেছে না বলিয়া তোমাদের ইচ্ছায় আমি নড়িব না ।”


                                এমনকি আশ্রমের বাতাবরণ বজায় রাখার জন্য লীলানন্দ স্বামী তাকে তার মাসির কাছে রেখে আসতে চাইলে , আত্মসন্মান সম্পন্ন দামিনী দৃঢ় স্বরে বলেছে –


“... আমার ভার বেশি ; সে ভার আপনি সাধ করিয়া লইয়াছেন ; এ আপনি অন্যের ঘাড়ে নামাইতে পারিবেন না ।”

তবে একমাত্র শচীশের শিষ্যত্ব স্বীকার করা ছাড়া আর কারো কাছে সে ঘুঁটি হতে চায় নি । দামিনী শুধুমাত্র শচীশকে গুরু হিসেবে পেতে চেয়েছে এবং শচীশ তা মেনে নেওয়ার পর –


“ দামিনীর যে অসহ্য দীপ্তি ছিল তার আলোটুকু রহিল , তাপ রহিল না ।”


                                শচীশের সাথে মানসিক দূরত্ব অনুযায়ী স্বামীজির সঙ্গে দামিনীর সম্পর্কের হেরফের হয়েছে । এরপর নবীনের স্ত্রী আত্মহত্যা করলে তারা তিনজন সেই আশ্রম থেকে বেড়িয়ে আসে । এরপরই ঘটনাচক্রে দামিনী সমাজকে অগ্রাহ্য করে , বৈধব্যকে তুচ্ছ করে শ্রীবিলাসকে বিয়ে করে । এখানেই দামিনী অন্যান্য চরিত্র থেকে স্বতন্ত্র হয়ে উঠেছে ।


উপসংহারঃ পূর্বযুগের সমাজ থেকে আধুনিক সমাজে নারীর অবস্থান যে কত বিচিত্র সংকটের সম্মুখীন হয় এবং তার পরীক্ষাগার হয়ে উঠেছে চতুরঙ্গ উপন্যাসটি । সমাজের অচলায়তনকে একা দৃঢ় ব্যাক্তিত্বের সাথে ভেঙ্গে দামিনী বেড়িয়ে এসেছে শনিত উজ্জ্বল হয়ে । এখানেই চরিত্রটির সার্থকতা



If you liked our effort please like our facebook page - https://www.facebook.com/bengaliliterature4you/ 

Soon we will upload our youtube channel. Connected with us .

No comments:

Post a Comment